কক্সবাজারের পূরাকীর্তি সমৃদ্ধ এলাকা রম্য ভূমি রামু। খ্রীষ্টপূর্ব ২০০ অব্দের আগে পর্তুগীজ ঐতিহাসিক ব্যারোস এর বর্ণনায় ধান্যবতী রাজ বংশের ইতিহাসে রাং-উ, আরবী ঐতিহাসিকদের রুহমী রাজ্য, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের রাজর্ষি উপন্যাসের রম্যভূমি হতে শুরু করে বর্তমান বা সমকালীন গৌরব গাঁথার অংশীদার ঐতিহ্যবাহী রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় রামুবাসী তথা কক্সবাজার জেলার একসময় সকল রাজনৈতিক চিন্তা, চেতনা ও সংস্কৃতি চর্চার প্রাণকেন্দ্র ছিলো। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে যুগ যুগ ধরে সুনাম অর্জন করা এ বিদ্যালয় চত্বরে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার প্রাক্কালে নির্মিত হয় কক্সবাজার জেলার প্রথম শহিদ মিনার।
এরপর থেকে এটা রামুবাসীর কেন্দ্রিয় শহিদ মিনার হিসেবে আন্দোলন সংগ্রামে অনুপ্রেরনা যুগিয়ে আসছে। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর উ খিজারী দালাল (১৮৬৮-১৯৪০) রামুর ইতিহাসে একটি প্রাতস্মরণীয় নাম। ১৯১৪ সালে তাঁর হাতে গড়া বিদ্যালয়টি তৎকালীন কক্সবাজার জেলার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ১৯১৯ সালে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সর্বপ্রথম উচ্চ বিদ্যালয়। দুই দশমিক পয়ত্রিশ একর জমি ক্রয় করে এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে তিনি তৎকালীন মুদ্রা সত্তর হাজার (৭০,০০০) টাকা ব্যয় করেন। অগ্নিযুগের বিপ্লবী পূর্ণেন্দু দস্তিদার ও একসময় এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। এ বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে শহিদ মিনার নির্মাণে অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম আলহাজ্ব ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী, প্রবীন শিক্ষাবিদ ও রামু কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মোশতাক আহমদ, প্রয়াত ক্ষেমেশ বড়ুয়া, মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমদ, মংখ্যরী বড়–য়া, আতর আলী প্রমূখ।
এ শহিদ মিনার কে পুরনো আদল ঠিক রেখেই ২০১০ সালে সংস্কার করা হয়েছে। রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনের এ শহীদ মিনারটি সংস্কারের উদ্যোগ নেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। মহান মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারীর স্মৃতির প্রতীক কক্সবাজারের প্রথম শহীদ মিনার পূণ সংস্কারে জরাজীর্ণতা কাটিয়ে হয়ে উঠেছে আরো বর্ণিল ও দৃষ্টিনন্দন।
রামু উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল জানান, ১৯৭২ সালে নির্মিত কক্সবাজার জেলার প্রথম শহিদ মিনার এটি। স্বাধীনতার পর নির্মিত শহিদ মিনারটি ৩৮ বছর পর সংস্কার করা হয়। বাঙ্গালী জাতীয় চেতনা ও আন্দোলন কর্মকান্ডের সূত্রপাত হয় শহিদ মিনার থেকেই। শহিদ মিনারের গুরুত্ব আগামী প্রজন্মের কাছে অর্থবহ করে গড়ে তোলার জন্য পুরনো নকশা ঠিক রেখেই নতুন আঙ্গিকে সংস্কার কাজ করা হয়েছে।
রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছোট্ট শহিদ মিনারই ছিলো রামু উপজেলার উল্লেখ করার মতো একমাত্র শহিদ মিনার। তাছাড়া রামুতে বড় জমায়েত হাওয়ার মতো জায়গারও অভাব। তাই রামু উপজেলা অফিসের সামনে পরিত্যক্ত পুকুর ভরাট করে ২০০১ সালে নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান তৎকালীন রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার করার সিদ্ধান্ত নেন। ঢাকার শান্তা মরিয়ম ইউনিভার্সিটির ফাইন আর্টস বিভাগের শিক্ষক শামীমের নেতৃত্বে একদল তরুন ছাত্র ডিজাইনের কাজ শুরু করেন। মেধাবী ছাত্র দুলালের ডিজাইন চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়। প্রকৌশলী মোহাম্মদ সহিদুজ্জামানের কনসেপ্টে ষ্টেইনলেস ষ্টীল, মার্বেল সমন্বয়ে শহিদ মিনারটি তৈরী সম্পন্ন হয়। অবারিত সমুদ্রের ঢেউয়ের উপর দিগন্তের সীমানার নিচে শহিদের লাল রক্ত ঝরছে, সব কিছু ছাপিয়ে ‘অ‘ ‘ক’ বর্ণমালা আদিগন্ত বিস্তৃত। এ শহিদ মিনার উদ্বোধনের জন্য আসতে না পারলেও নিজের হাতে শেষ বাণী লিখেছিলেন, ভাষা সৈনিক গাজীউল হক। শহিদ মিনারটি উদ্বোধন করা হয় ২০০৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। উদ্বোধন করেন, আরেক ভাষা সৈনিক সাদেক খাঁন।
রামুর তরুন লেখক মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর জানান, উপজেলা পরিষদ চত্বরে নির্মিত কেন্দ্রিয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গনের সবুজ চত্বরে প্রায়ই কোন না কোন সভা-সমাবেশ আর সৃজনশীল কর্মসুচী পালন করা হচ্ছে। যার ফলে এটি রামুর সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চার প্রানকেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
#############################
রামুর পশ্চিম গনিয়াকাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পুরস্কার বিতরণ ও বনভোজন সম্পন্ন
রামু প্রতিনিধি :::
রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পশ্চিম গনিয়াকাটা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান ও বনভোজন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিদ্যালয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজিত বনভোজন ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইব্রাহিম খলিল বাহাদুর।
এতে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন, সাইমুম সরওয়ার কমল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান, সহকারি শিক্ষক মিজানুর রহমান, মহিলা ইউপি সদস্য আনার কলি, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. হোছন, কোষাধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম, পরিচালনা কমিটির সদস্য ফরিদুল আলম, শামসুল আলম, ম্যানেজার সুলতান, জন্নাত উল্লাহ প্রমূখ।
এতে সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন, পশ্চিম গনিয়াকাটা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জিন্টু বড়–য়া ও তছলিমা আকতার। অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়িদের পুরস্কার বিতরণ করেন।
উল্লেখ্য রামুর দূর্গম পাহাড়ি এলাকা পশ্চিম গনিয়াকাটায় স্থানীয়দের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা লাভ করে পশ্চিম গনিয়াকাটা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী এ বিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভের সুযোগ পাচ্ছে। বিদ্যালয়ে ৪জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন।
########################
রামু আবু বকর ছিদ্দিক (রা.) ইন্সটিটিউট দাখিল মাদরাসায় অমর একুশে উদযাপন
রামু প্রতিনিধি :::
রামু চা বাগান হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রা.) ইন্সটিটিউট দাখিল মাদরাসায় যথাযথ মর্যাদায় অমর একুশে ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে র্যালী, কুইজ প্রতিযোগিতা, ভাষা শহিদদের জন্য বিশেষ মোনাজাত এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সকাল আটটায় মাদরাসা প্রাঙ্গন থেকে শুরু হওয়া র্যালীটি চা বাগান স্টেশন সহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
র্যালী শেষে মাদরাসা মিলনায়তনে সিনিয়র শিক্ষক আবদুল মতলব এর সঞ্চালনায় আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন, মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সহ সভাপতি মাওলানা নুরুল হুদা। এতে পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবু তাহের, মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা শুয়াইব, শিক্ষানুরাগি মাস্টার ফখরুদ্দিন টিটু, সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, এজাহার মিয়া, নুরুল হোছাইন, রমিজ আহমদ, মো. হাশেম, ওবাইদুল হক, আবদুল মুবিন, শিক্ষকবৃন্দের মধ্যে মাওলানা শহিদুল্লাহ মাওলানা কামাল হোছাইন, সানা উল্লাহ বাবর, রেহেনা আকতার, মুর্শিদা আকতার, রোকসানা আকতার, মুর্শিদা আকতার লাকি, মোমেনা আকতার, শাহিদা খানম, নুরান মো. শারমিন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। এতে ভাষা শহিদদের জন্য বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা নুরুল হুদা। শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করে মাদরাসার শিক্ষার্থী হামিদ উল্লাহ।
পাঠকের মতামত: